বিলুপ্ত ছিটমহলের উন্নয়নে বাংলাদেশ অনুকরনীয়

ছিটমহলবাসীর পক্ষে কথা বলায় ছাড়তে হয়েছিল রাজনৈতিক দলের পদ। ছেড়েছেন রাজ্য সরকারের বিধায়কের পদও। সব ছেড়ে বঞ্চিত মানুষের পক্ষে আন্দোলন করার সময় ২০০৯ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। মারা যাওয়ার আগে বিনিময় আন্দোলনের দায়িত্ব ছেলের হাতে দেন দীপক সেন। এরপর ছেলে দীপ্তিমান সেনগুপ্তও নেমে পড়েন ছিটমহলবাসীর মুক্তির আন্দোলনে। ভারতের দিনহাটায় থাকা ছিটমহল আন্দোলনের অন্যতম এই নেতার সঙ্গে গতকাল টেলিফোনে কথা বলেছেন কালের কন্ঠের লালমনিরহাট প্রতিনিধি হায়দার আলী বাবু।

 

ছিটমহলবাসীর পক্ষে কথা বলায় ছাড়তে হয়েছিল রাজনৈতিক দলের পদ। ছেড়েছেন রাজ্য সরকারের বিধায়কের পদও। সব ছেড়ে বঞ্চিত মানুষের পক্ষে আন্দোলন করার সময় ২০০৯ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। মারা যাওয়ার আগে বিনিময় আন্দোলনের দায়িত্ব ছেলের হাতে দেন দীপক সেন। এরপর ছেলে দীপ্তিমান সেনগুপ্তও নেমে পড়েন ছিটমহলবাসীর মুক্তির আন্দোলনে। ভারতের দিনহাটায় থাকা ছিটমহল আন্দোলনের অন্যতম এই নেতার সঙ্গে গতকাল টেলিফোনে কথা বলেছেন লালমনিরহাট প্রতিনিধি হায়দার আলী বাবুকালের কণ্ঠ : ছিটমহল বিনিময়ের পর আপনারা ঘোষণা করেছিলেন, প্রতিবছর ১ আগস্ট ছিটমহলের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করবেন। ঠিক সেই ঘোষণা অনুযায়ী বাংলাদেশে থাকা বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোতে পালিত হচ্ছে নানা কর্মসূচি, স্থানীয় বাসিন্দারা করছেন আনন্দ-উল্লাস। কিন্তু এর একেবারে উল্টোচিত্র হিসেবে প্রথম বর্ষপূর্তি পালনের বদলে কেন অন্ধকার দিবস পালন করা হচ্ছে ভারতের বিলুপ্ত ছিটমহলে?

দীপ্তিমান সেনগুপ্ত : ছিটমহলগুলো স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু সাবেক বাংলাদেশি ছিটের বাসিন্দারা এখনো এর কোনো সুফল পায়নি। বাংলাদেশে যে উন্নয়ন হয়েছে তা প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু গত এক বছরে ভারতে থাকা বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এখন পর্যন্ত এখানকার সরকার বঞ্চিত মানুষগুলোকে জমির কাগজই দিতে পারেনি। হয়নি পানীয়জলের ব্যবস্থা, তৈরি হয়নি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা রাস্তাঘাট। সমাজকল্যাণ দপ্তরও করেনি কিছু। কারো সরকারি চাকরিও হয়নি। তাই প্রতিবাদ হিসেবে আমরা দিনটিকে অন্ধকার দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছি।

কালের কণ্ঠ : ছিটমহলের উন্নয়নে বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের প্রাথমিক বরাদ্দ তো অনেক বেশি ছিল। এর পরও কেন এ অবস্থা?

দীপ্তিমান : ভারতের সঙ্গে মিশে যাওয়া সাবেক বাংলাদেশি ছিটমহল এবং বাংলাদেশ থেকে নিজ দেশে চলে আসা হাজারখানেক মানুষের জন্য ভারতীয় সরকার প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আমাদের হিসাবে এখন পর্যন্ত বড়জোর পৌনে চার কোটি টাকা খরচ হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে চলে আসা ২০১টি পরিবারের জন্য টিনের খুপড়ি ঘর তৈরি করতেই নাকি খরচ হয়ে গেছে ১৭ কোটি টাকা। এর পরও এক বছর আগে যা ছিল এখনো সেই অবস্থায় আছে সাবেক বাংলাদেশি ছিটমহলগুলো।

কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে চলে গেছে তাদের কী অবস্থা?

দীপ্তিমান : তাদের অবস্থা আরো কঠিন। তারা আরো বেশি খারাপ অবস্থায় আছে।

কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণকারী বিলুপ্ত ভারতীয় ছিটমহলবাসীর উন্নয়ন নিয়ে কী বলবেন?

দীপ্তিমান : বাংলাদেশে যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে এবং হচ্ছে। রাস্তাঘাট হচ্ছে, পানীয়জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে এবং ঈদের সময় অভাবী মানুষকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। অনেক আগেই ভূমি জরিপের কাগজ সেখানকার বাসিন্দাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। সেই হিসেবে বলা যায়, বাংলাদেশ প্রাথমিক কাজ প্রায় শেষই করে ফেলেছে।

কালের কণ্ঠ : তাহলে বলতে গেলে ছিটমহল নিয়ে এখনো আপনাদের আন্দোলন শেষ হয়নি। সেটা অব্যাহত থাকবে?

দীপ্তিমান : অব্যাহত থাকবে মানে বাঁচার তাগিদেই সেই আন্দোলন চলবে।

কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশে গত এক বছরে ছিটমহলের উন্নয়ন নিয়ে কী বলবেন?

দীপ্তিমান : বাংলাদেশ সরকার যে উন্নয়নটা করছে তা একেবারে মানুষের দাবি সামনে রেখেই। এটাই হচ্ছে সহানুভূতিশীলতার বিষয়। বাংলাদেশের মানুষের ১৯৭১-এর যে অভিজ্ঞতা তা কাজে লাগাতে পেরেছে বলেই বাংলাদেশ এত দ্রুত সব করতে পারল বলে আমি মনে করি। বিলুপ্ত ছিটমহলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এই উন্নয়নকেই অনুসরণ করা উচিত ভারতের।

[courtesy: Kaler Kantho]

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান